কবি কামরুন নাহার’র অণুগল্প: সুখ

সাহিত্য

by protibimbo
০ মন্তব্য ২৮ বার পড়া হয়েছে

সুখ
কামরুন নাহার

হঠাৎ করেই তোমার সাথে ভালো বাসা হয়ে গেল,কিভাবে হলো কেমনে হলো বুঝতেই পারলাম না — তবুও মেনে নিয়ে চলছিলেম,কিন্তু মাঝ পথে এসে দেখি সেই সেরা গানের মতো চলছে জীবন ” সুখের পৃথিবী সুখের অভিনয়, যত আড়ালে রাখো আসলে কেউ সুখি নয়।”( সবিতা) ছদ্ম নাম
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে এই গানটি গাইছে আর নাস্তা তৈরি করছিল –সুজন ঘুম থেকে উঠে সবিতাকে একটা থাপড় দিল, সবিতা! এ কি করলে তুমি। আমি এমন কি করলাম থাপড় দিলে ; সুজন একটা কথা বলবিনা একদম চুপ, সকাল সকাল চেচামেচি করতে ভাল লাগছেনা।
সবিতা –তো তাই গাইছে যা সে প্রতি নিয়ত ভোগছে মানসিক শারিরীক যন্ত্রণায়। কাউকে বলতে পারছেনা।কারণ হঠাৎ করে সুজনের সাথে প্রেম হয়ে যায় তার পর বাবা-মার অমতেই বিয়ে তাই মানিয়ে চলছিল।কিন্তু সুজনের এহেন আচরণ তাকে মর্মাহত করে।এখন কি করবে ভেবে পারছেনা। তাই সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখে বিভিন্ন কাজে তবুও চলুক না এমনি করে সংসার।কিন্তু আর পারা যাচ্ছে না। অধেক চা খেয়ে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো — যাবার সময় বলে গেল শোন সুজন আমাকে কাবিনের টাকা দিতে হবেনা সেই টাকা দিয়ে একটা দাসী কিনে এনো আমি তোমার বাড়িতে দাসী হতে আসিনি,চেয়েছিলাম তোমার সাথে আজীবন থাকবো কিন্তু তুমি তা হতে দিলে না। যেহেতু এটা তোমার বাড়ি আমার কিছু না, তাই আল্লাহর দুনিয়ায় যদি কোথাও ঠাঁই মিলে তবে থেকে যাবো কোথাও, ভেবে ছিলাম তোমাকে মুক্ত করে দিবো কিন্তু তোমার অনাগত সন্তান আমার গর্ভে তাই সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করো বাচ্চাটা ভুমিষ্ট হলে ডিভোর্সের কাগজ পাবে। এই বলে সুজনের বাড়ির চৌকাঠ পারি দিতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে শাশুড়ী মা হাত টেনে ধরে বলে তুমি আমার ছেলের বউ আবার আমার ছেলের বংশধর তোমার গর্ভে তুমি কোথায় যাবে বউ মা। এই প্রথম শাশুড়ীর নজরে আসে, সবিতা কান্না জনিত কন্ঠে বলে মা আমি আপনার ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি চলে যাবার জন্য নয়।কিন্তু আপনার ছেলে আমাকে প্রতিদিন শারিরীক মানসিক যন্ত্রণা দেয় আমি এর মধ্যে পাঁচ বছর কাটিয়েছি তবুও চেযেছি থাককে কিন্তু আপনার ছেলে বলে এ বাড়ি আমার নয় বলুন না মা আপনি আমার জায়গা হলে কি করতেন? শাশুড়ীর বলে বউমা যা হবার হয়েছে তুমি ঘরে চলো হাত ধরে বউকে ঘরে নেয়। এসময় সুজন কিছু বলে না। রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়ে সুজন বারান্দায় বসে সিগারেট টানে ভাবে মায়ের জন্যই বউয়ের সাথে এমন ব্যবহার করছি সেই মা কিনা আজ সবিতাকে ঘরে আনলো হিসেব মিলছেনা।তবে কি–! অন্য মতলব আটলো মা।নাকি সন্তান হবে বলে মা — সবিতার সাথে সম্পর্ক করলো। থাক সে-সব কথা পাঁচ বছর পর সবিতা মা হতে যাচ্ছে আমার সন্তানের তাই সবিতার কাছে গিয়ে পাশে বসে বলে আমারে মাফ করে দাও এখন তুমি আমার সন্তানের মা একটু যত্ন নেওয়া দরকার তোমাকে তাই কাল থেকে আমি তোমাকে সাহায্য করবো যতটা পারি তুমি হাসি খুশি থাকবে।সবিতা কিছু বলছেন না নীরবে চোখের জল ফেলছে।সুজন সবিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে বউ সরি।এবার সবিতার রাগ কিছুটা কমে, বলে মনে থাকবেতো ; সুজন কি? এতোক্ষণ যা বললে ওহ– দু’ জনেই হাসে সেই প্রথম দিনের মতো।
এভাবে কেটে যায় আটটি মাস,সুজন সকালে অফিসে যাবার আগে সবিতাকে নাস্তা বানানোর কাজে সহযোগিতা করে আবার অফিস থেকে এসে রাতের রান্নাার কাজে।শাশুড়ী কিছু করেনা, একটা ননদ সে পড়া লেখা করে সবিতা ননদকে বোনের মতো দেখে তাকে কোন কাজের কথা বলেনা। একদিন সকালে সবিতার প্রসবব্যাথা উঠে সুজন হাসপাতালে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু শাশুড়ী বলে আমাদের বাচ্চাতো বাড়িতেই হয়েছে এতো ব্যস্ত হচ্ছিস কেনো? এদিকে সবিতা কান্না করছে শরির নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু করতে পারছেনা তার বাবা- মার সাথে কথা হয়না পাঁচবছর তারাও খবর নেয় না।কারণ সুজনের কাছে তার পরিবার দিতে চাইনি। সবিতাকে সুজন জোর করে হাসপাতালে নেয়।ডাক্তার বলে এতো দেরি করে এনেছেন এখন মুমূর্ষু অবস্থা দু’,জনের একজনকে বাচাতে হবে আপনি বলেন কাকে বাঁচাবো। সুজন বলে আমার সবিতাকে বাচান ডাক্তার কিন্তু শাশুড়ী বলে আমার বংশের বাতি দরকার তাকে বাচ্চান কারণ সবিতা ছেলে সন্তানের মা হতে যাচ্ছে এটা শাশুড়ী জানতো। অপারেশন থিয়েটার নিয়ে গেল সবিতাকে সিজারে ছেলে সন্তান হলো ডাক্তার সবিতার সন্তানকে কোলে তুলে দিল সুজনের কাছে সুজন,কোলে নিয়ে বলে ডাক্তার সবিতা কেমন আছে।ডাক্তার বলে চব্বিশ ঘণ্টা গেলে বুঝা যাবে আল্লাহ কে ডাকুন। সুজন মায়ের কাছে ছেলেকে দিয়ে পাশের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে যায়। রাত পোহালো নামাজে বসে সুজন আল্লাহর কাছে প্রর্থনা করে বলে হে– রব আমি পাপি অনেক দিন আপনাদের কাছে কিছু চাইনি আজ আমার মাসুম বাচ্চার জন্য আমার সবিতাকে ফিরিয়ে দিন। প্রার্থনাতে বসে আর ছেলের খোঁজ নেননি। ভোর হলো ফজরের নামাজ শেষ করে আবার আল্লাহ কাছে বলেন হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন, আমার অপরাধ মার্জনা করুন আমার সবিতাকে ঘরে ফিরেদিন সুস্থ করে দিন। তারপর হাসপাতালে গেল ছেলেটাকে সেলাইন দিয়ে রাখা মোটামুটি সুস্থ। সকাল আটাটায় ডাক্তার এলেন সুজন ডাক্তারকে বলেন ডাক্তার আমার সবিতা কেমন আছে? ডাক্তার সবিতা দেখে সুজনকে খবর দিল সুজনের চোখে পানি আজ শুধু সবিতা ছাড়া করোপ্রতি তার মায়া নেই। ডাক্তার বলে সবিতার জ্ঞান ফিরেছে শুধু আপনি যেতে পারনে, সুজন আলহামদুলিল্লাহ। দৌড়ে সবিতার কছে যায়, সবিতা সুজনকে দেখে খুশি হয় আস্তে করে বলে তুমি কান্না করছো কেনো।আমি ভালো আছি। এর পর হাসপাতালের বেডে দেয়, সন্তানের জন্য এখন সবিতার কান্না পাচ্ছে — আমার ছেলে কই তখন ননদ ছেলেকে এনে বলে ভাবি নাও তোমার ছেলে। তোমার কোন জ্ঞানছিলনা তাই ভাইয়া রাতে মসজিদেই ছিল আমরা তোমাদের ভালোবাসার সন্তানকে নিয়ে সারারাত কাটিয়েছি এই নাও তোমাদের ভালোবাসা। আর সবিতার সেই গান সুখের পৃথিবী সুখের অভিনয় — যতো আড়ালে থাকো আসলে কেউ সুখি নয়। সবিতা – ও সুজন হাসে। আসলে সুখ শব্দটি আপেক্ষিক মেনেে আর মানিয়ে নিয়েই চলতে পারলে জীবন সুন্দর।

সমাপ্ত।

সম্পর্কিত খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আবুল খায়ের 

নির্বাহী সম্পাদক: 
বার্তা প্রধান:

অফিস: বাড়ি ০৭, সড়ক ১৪/সি, সেক্টর ৪,

উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।

যোগাযোগ: ০১৭১৫৩৬৩০৭৯

বিজ্ঞাপন: ০১৮২৬৩৯৫৫৪৯

Email: khair.hrm@gmail.com

info@dainikprotibimbo.com

protibimboprokash.com

Facebook

©2025 Dainik Protibimbo – All Right Reserved. Designed and Developed by Bangla Webs