কবি জাকিয়া সুলতানা শিল্পী’র কবিতা

সাহিত্য

by protibimbo
০ মন্তব্য ১১১ বার পড়া হয়েছে

1) নারী তুমিই আগুন তুমিই অশ্রু
জাকিয়া সুলতানা শিল্পী

রাত্রির অন্ধকার যখন
একজন নারীর গলার নিচে থমকে যায়,
যখন সমাজ চুপ থাকে—
একটা মেয়ের চিৎকার তখন বাতাস হয়ে উড়ে যায়
অচেনা কোনো আকাশে।

যখন দেহের ওপরে নখের দাগ রেখে যায় সভ্যতা,
তখন সময়ও মুখ ঢাকে লজ্জায়।
ধর্ষণ শুধু শরীরের নয়—
মানুষের বিবেকেরও ধর্ষণ ঘটে প্রতিবার।

আমি লিখতে বসি, কলম কাঁপে,
কাগজে ফোটে রক্তের মতো অক্ষর—
“সে তো মানুষ ছিল!”
কিন্তু সমাজের দেয়ালে তখনও ঝুলে থাকে নীরবতার বিজ্ঞাপন।

banner

কেউ বলে, “ওর পোশাক এমন ছিল”,
কেউ বলে, “রাতটা বেশি হয়ে গিয়েছিল”—
আর আমি শুনি, শুনি মায়ের কান্না,
যে কাঁদে সন্তানের আত্মা হয়ে।

তবুও, আমি ভয় পাই না এখন।
কারণ জানি—
নারী কেবল ভিকটিম নয়,
সে সৃষ্টি, সে আগুন, সে আকাশের জল।

যেখানে মেয়েদের মুখ বন্ধ করে রাখা হয়,
সেখানেই জন্ম নেয় আরেকটি মীরাবাঈ,
আরেকটি বেগম রোকেয়া,
যারা আগুনের ভেতর দিয়েই আলোর পথ খুঁজে নেয়।

আমি সমাধান দেখি—
শিক্ষায়, আত্মমর্যাদায়, সংহতিতে,
ছেলেশিশুকে শেখাও, “না মানে না।”
শেখাও—সম্মান মানে মানুষকে দেখা,
শরীর নয়, আত্মা দেখা।

মেয়ে শিশুকে শেখাও—
নিজেকে ছোট মনে করা পাপ,
চুপ থাকা অপরাধ।
কলম হাতে তুলে নাও,
শব্দ দিয়ে প্রতিরোধ গড়ো।

আইন শুধু বইয়ের মধ্যে নয়—
মননের ভিতর জন্ম নিতে দাও ন্যায়বোধ।
প্রতিটি পরিবার হোক এক একটি ন্যায়-বিদ্যালয়,
যেখানে ছেলে-মেয়ে নয়, মানুষ বড় হয়।

আমি চাই না আর কোনো মেয়ের গল্প শেষ হোক রক্তে,
আমি চাই—তার গল্প শেষ হোক সূর্যোদয়ে,
যেখানে লেখা থাকবে—
“আমি মানুষ, আমি মুক্ত,
আমার নাম নারী।”

 

2) আগুন লাগার খেলা
জাকিয়া সুলতানা শিল্পী

আগুন কখনো লাগে না—
আমরাই আগুন লাগাই,
লোভের কেরোসিনে, ক্রোধের দেশলাইয়ে
একেকটা মানবদেহ জ্বলে ওঠে চুপিচুপি,
একেকটা শহর ধোঁয়ায় ঢেকে যায়।

আমরাই আগুন লাগাই—
ভালোবাসার ভাষায় মিথ্যে উচ্চারণে,
বিচারের টেবিলে অন্যায়ের রায় লিখে,
মসজিদের ছায়ায় ঘুষের ছায়া পেতে,
স্কুলের মাঠে স্বপ্ন পুড়িয়ে দিই ধীরে ধীরে।

তারপর বলি— আগুন লেগেছে!
হায়, কে বুঝবে— কার বোঝার ক্ষমতা থাকবে,
এই আগুন আসলে আমাদের অন্তরেই জ্বলছে,
আমাদের চেতনার পরিত্যক্ত ঘরে,
যেখানে ন্যায়বোধের ধূলিকণা এখন কেবল ছাই।

দেশ জ্বলছে— মানুষ জ্বলছে
রাস্তায় রক্ত, মঞ্চে মিথ্যে,
কণ্ঠে ধর্ম, মনে দল,
মানুষ মানুষকে চিনতে ভুলে গেছে।
হৃদয় আজ আর জলের মতো স্বচ্ছ নয়,
বরং দাহ্য— অনবরত জ্বলতে থাকে
যেন প্রতিটি চোখে মজুত একেকটি পেট্রোল বোমা।

কেউ বলে রাজনীতি, কেউ বলে ভাগ্য,
কেউ আবার বলে—
“সবই আল্লাহর পরীক্ষা।”
কিন্তু কে বলবে— কার বলার সাধ্য আছে
আমরাই আল্লাহর নিয়ামত পুড়িয়ে দিচ্ছি প্রতিদিন!
আমরাই শিশুদের ভবিষ্যৎ ছাই করছি
একটি সিগারেটের আগুনে,
একটি লোভী সিদ্ধান্তে,
একটি নীরব সম্মতিতে।

আগুন কখনো লাগে না—
মানুষই আগুন লাগায়,
তার নিজের লোভে, নিজের ভয়েতে,
নিজেকে সত্যের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে ।
আর তারপরই পৃথিবী জ্বলে—
জ্বলে গাছ, জ্বলে নদী,
জ্বলে মানুষের বিবেক।

তবু আমরা দেখি—
দূরে, এক নীলাভ ভোরে,
একটি শিশুর চোখে এখনো অক্ষত স্বপ্নের প্রদীপ,
একটি নারীর প্রার্থনায় এখনো জ্বলে সাদা আলো,
একজন শিক্ষকের নিঃস্ব কণ্ঠে এখনো অনল নয়, আশা।

হয়তো আগুন নিভবে না এখনই,
কিন্তু কেউ একজন নিভিয়ে ফেলবে—
তার অন্তরের ভেতর থেকে শুরু করে,
যেদিন সে আর আগুন লাগাবে না,
সেদিন পৃথিবী আবার পাবে তার সবুজ আভা।

আগুন কখনো লাগে না,
আমরা আগুন লাগাই।
কিন্তু,
আমরাই পারি প্রথম বৃষ্টি হতে—
যে বৃষ্টি ছুঁয়ে দেবে জ্বলন্ত মানবতার তৃষ্ণা।

 

 

সম্পর্কিত খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আবুল খায়ের 

নির্বাহী সম্পাদক: 
বার্তা প্রধান:

অফিস: বাড়ি ০৭, সড়ক ১৪/সি, সেক্টর ৪,

উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।

যোগাযোগ: ০১৭১৫৩৬৩০৭৯

বিজ্ঞাপন: ০১৮২৬৩৯৫৫৪৯

Email: khair.hrm@gmail.com

info@dainikprotibimbo.com

protibimboprokash.com

Facebook

©2025 Dainik Protibimbo – All Right Reserved. Designed and Developed by Bangla Webs