প্রশ্নের মুখে সিডিপেপের ১.০৫ বিলিয়ন ডলারের ‘সরকারি চুক্তি’, তদন্ত শুরু; নজরে অব্যবস্থাপনাও, হতে পারে মামলা
নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হোকুলের নেতৃত্বে পরিচালিত কনজ্যুমার ডাইরেক্টেড পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের (সিডিপেপ) সংস্কার নিয়ে মার্কিন বিচার বিভাগ একটি ফেডারেল তদন্ত শুরু করেছে। প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের এই মেডিকেইড-ভিত্তিক হোম কেয়ার প্রোগ্রাম পুনর্বিন্যাসের প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা, কর্মীদের বেতন জটিলতা এবং তথ্য নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া একক প্রতিষ্ঠানের হাতে এসব কার্যক্রমের ভার তুলে দেওয়ায় পেছনে কোন অনিয়ম রয়েছে কি-না সেসব বিষয়েও জানতে কাজ শুরু করেছে বিচার বিভাগ।
জানা গেছে, এই প্রোগ্রামের অধীনে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার রোগী ও সহায়তাকারী এতদিন বিভিন্ন ছোট-বড় ফিসকাল ইন্টারমিডিয়ারির মাধ্যমে সেবা পেতেন। কিন্তু গভর্নর হোকুলের প্রশাসন হঠাৎ করেই সেই সব সংস্থাকে বাদ দিয়ে পাবলিক পার্টনারশিপস এলএলসি (পিপিএল) নামের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে পুরো দায়িত্ব দেয়। রোগীদের পিপিএলে পুনরায় নিবন্ধনের নির্দেশ দেয়া হয়। যার ফলে দ্রুত রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত এপ্রিল থেকে সিডিপেপের সকল কার্যক্রম পিপিএলের নিয়ন্ত্রণে সম্পন্ন হচ্ছে। এতে করে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে দফায় দফায় প্রতিবাদ ও আন্দোলন করেছেন হোমকেয়ার সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও কেয়ারগিভাররা।
বহু সেবা প্রদানকারী ও ব্যক্তিগত সহকারী অভিযোগ করছেন, নতুন পদ্ধতিতে লগইন জটিলতা, টাইমশিট জমা দিতে না পারার কারণে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না তারা। যার ফলে প্রাতিনিয়ত সমস্যার মুখে পড়ছেন তারা। অনেকের মতে, পূর্বের ডেসেন্ট্রালাইজড পদ্ধতিই ছিল আরও মানবিক ও দক্ষ। এদিকে অনেক ব্যক্তিগত সহকারী দীর্ঘ সময় বেতন না পাওয়ায় অন্য কাজ খুঁজে নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ স্বাস্থ্য সুবিধা বা মজুরি কমে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এতে সেবার মানও পড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও পিপিএলের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা রোগী ও কর্মীদের সহায়তা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এখনও পর্যন্ত ২ লাখ ১০ হাজার কর্মীর বেতন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। যাদের ৮৮০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।
এদিকে বিচার বিভাগের ভোক্তা সুরক্ষা শাখা ইতিমধ্যে একটি ফেডারেল মামলায় তাদের উদ্বেগ জানিয়ে আদালতে একটি লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজ্য সংবেদনশীল স্বাস্থ্য তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত না করে এবং রোগীর যোগ্যতা সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করে পিপিএলে স্থানান্তরের কাজ চালিয়ে গেছে। তারা এটিও বলেছে, রূপান্তর প্রক্রিয়া ছিল গঠনগত ও পরিকল্পনাগত ত্রুটিপূর্ণ।
আরও গুরুতর অভিযোগ হলো, পিপিএলকে দেয়া ১.০৫ বিলিয়ন ডলারের সরকারি চুক্তি সঠিক নিয়মে প্রদান করা হয়েছে কী-না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তকারীরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন এবং এটি পক্ষপাতদুষ্ট বা সাজানো ছিল কী-না সে দিকেও নজর দিচ্ছেন। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তদন্তের পর ফৌজদারি কিংবা দেওয়ানি মামলা দায়ের হতে পারে।
সরকারের দাবি, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অপচয়, দুর্নীতি এবং অকার্যকর প্রশাসনিক খরচ কমানোর লক্ষ্যে। রাজ্যেন গভর্নর হোকুলের মুখপাত্র এই সংস্কারকে ‘প্রয়োজনীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ৬শরও বেশি মধ্যস্বত্বভোগী সংস্থাকে বাদ দিয়ে আমরা একটি স্বচ্ছ ও সাশ্রয়ী ব্যবস্থা গড়ে তুলছি। এরফলে প্রোগ্রামটিকে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, প্রক্রিয়াটি কার্যকরভাবে চলছে এবং সেবা অব্যাহত রাখতে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে নিউইয়র্ক রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগ তদন্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সংস্থাটি বলেছে, সেবা গ্রহণকারীদের নিয়মিত সেবা নিশ্চিত করতে এবং সহকারীদের ন্যায্য আচরণ দিতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রসঙ্গত, সিডিপেপ প্রোগ্রামের এই রূপান্তর এখন শুধুই একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়। এটি পরিণত হয়েছে নিউইয়র্কের হাজারো পরিবার ও সহায়তাকর্মীর জীবনযাত্রার প্রশ্নে। ফেডারেল তদন্তে যদি চুক্তি প্রক্রিয়া, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা কিংবা তথ্য সুরক্ষা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি গভর্নর হোকুলের প্রশাসনের জন্য একটি গুরুতর রাজনৈতিক ও আইনি সংকট ডেকে আনতে পারে।