এখানে ভোগান্তি ভাড়া দেয়া হয়। প্রবন্ধ। মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন

সাহিত্য

by protibimbo
০ মন্তব্য ৯৭ বার পড়া হয়েছে

এখানে ভোগান্তি ভাড়া দেয়া হয়
মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন

এই প্রথমবার মালয়শিয়া গমন করছি । তাই, একটু অস্থিরতাও কাজ করছে । অফিসের ব্যাপক ব্যস্ততা কোনরকম সামাল দিয়ে চললাম বাংলাদেশ শাহজালাল এয়ারপোর্ট । দীর্ঘ জ্যাম রসিকতা অতিক্রম করে এয়ারপোর্ট প্রবেশ করলাম। প্রবেশমুখে চেকিং শেষ করে বিমানের কাউন্টার ফেস করছি । বিমান কর্তিপক্ষ আমার পাসপোর্ট ছবি এবং আমার ফিজিক্যাল ছবি বারবার ম্যাচ করার চেষ্টা করছে, আমিই কি আমি কিনা । কিছুটা বিরক্তির ভাব উদয় ঘটলো মনের ভেতর । সবিনয়ে বললাম, ভাই এতো এতো দেশ ভ্রমণ করলাম এই জাতীয় সমস্যা এই প্রথম সম্মূক্ষিণ হলাম । তখনি, মনে মনে শঙ্কা অনুভব করছিলাম যে আজ যাত্রাপথে কুপা লেগেই গেল , না জানি আরও কত ভোগান্তির মুখোমুখী হতে হয়, ইতোমধ্যে বিমান ডেস্ক অথরিটি বলে উঠলেন, আপনার ভিসা বের করেন, আমারতো কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা, কি বলে ভিসা ছাড়াই আমি একটা দেশে চলে যাচ্ছি ! সাথে সাথে অ্যাডভোকেট তৈফিক ভাইকে দরাজ গলায় বললাম ভাই, পাসপোর্টে আমার ভিসা করা নেই, আমার ভিসা কোথায়? তিনি শান্ত স্বরে বললেন ভিসা পাসপোর্টে হয়নি, আপনি ই-ভিসা পেয়েছেন,টোকেন ইতোমধ্যে আপনাকে ওয়াটসাপ দিয়েছি। একটু মোটা গলায় বললাম, ভাই আপনি প্রিন্ট করে দিবেন না? ভিসা কেটেছি সেই দুই মাস বা ততোধিক আগে, মনে থাকে? আপনি আবার সেন্ড করেন প্লিজ । অ্যাডভোকেট সাহেব অত্তান্ত মৃদুভাষী, নরম স্বর নামিয়ে বললেন আমি এখনি দিচ্ছি, আপনি পাশেই প্রিন্ট করে নিতে পারবেন । বলতে পারেন পেরেশানি ক্রমাগত বেড়ে চললো । আমার সোনার দেশের পোর্ট বলে কথা,- এখানে ভোগান্তি ভাড়া দেয়া হয়, প্রতিটি কদমে কদমে ভোগান্তি আর জটিলতার জটলা আমার দেশের নিত্য চরিত । এক ভাইকে বললাম ভাই প্রিন্ট করা যাবে? তিনি মৃদু স্বরে বললেন- কত পিচ করবেন? ১ পিচ, তার চুরত মোবারক ক্রমেই অমাবস্যা নেমে এলো । ভাই প্রিন্ট হবে? সামনে গেলেই পাবেন । মনে হলো তিনি উত্তরটা দিয়ে আমার তিনপ্রজন্মের উপকার করলেন । বেশ হেটে সামনে আসনরত ভদ্র মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম প্রিন্ট হবে ? বললেন কত পিচ? ১ পিচ। বললেন ত্রিশ টাকা । আমি ভাবলাম একশত টাকা চায় কিনা! ই-ভিসা প্রিন্ট করে বিমানের বোর্ডিং পর্বটা শেষ করলাম । ইমিগ্রেশন স্টেপ । খুব কচ্ছপ গতিতে ইমিগ্রেশন কাজ চলছে। একটা বিষয় খুব লক্ষ্য করছি, ইমিগ্রেশন পুলিশ যেন মূল দায়িত্ব ছেড়ে (কাউন্টার ডেস্ক ছেড়ে) ভিন্ন কোন গায়েবি কাজেই মনোযোগী মনে হচ্ছে । দীর্ঘ লাইনের বিড়ম্বনা শেষে পাসপোর্ট সহ যাবতীয় ডকুমেন্টস সাবমিট করতেই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বললেন আপনি ভিসা টা ওখানে চেক করেন, ওখানে মানে ইমিগ্রেশন কক্ষের বাম কোণে , সেখানেও এক দীর্ঘ লাইন, এক ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে কর্তাবাবু বললেন ইন্টারনেট কাজ করছে না । ইন্টারনেট আসুক, একটু অপেক্ষা করুন । কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ করলাম পুলিশ ভাইদের মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর কানাগুষা হয়, তারপর দেখি সিভিল এক ব্যক্তিকে নিরাপত্তা কক্ষের ( ইমিগ্রেশন কক্ষ) স্টেজ গুলো পার করে দিচ্ছে, সেখানেও পুলিশ ভাইদের মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণ নেগোশিয়েট লক্ষ্য করলাম ।

এদিকে আমার সাথে অসংখ্য যাত্রীরা ভুগছি সময় ব্যবস্থাপনার বিড়ম্বনা । কিন্তু তাদের এই নিয়ে যেন কোন মাথাব্যথাই নেই । কিছুক্ষণ পর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলে উঠলেন, আপনারা ৩ নাম্বার কাউন্টার যান, ওখানে ইন্টারনেট অ্যাভেলেবেল । অপেক্ষার শেকড় ক্রমাগত দীর্ঘতর হতে চলেছে । এদিকে ফ্লাইট টাইমও ঘনিয়ে আসছে, ক্লান্ত অবসাদে বিরক্তির রেখাগুলো ক্রমাগত ধৈর্য হীন ঘটে চলেছে । ধর্য্যের সীমারেখা নিষ্ক্রিয় হতে চলেছে । চললাম কাউন্টার নাম্বার ৩- আমার সাথে শুধুই আমি নই , আরও বিশজনেক যাত্রীর অবস্থা একিহাল । এখানেও অবস্থার রং আরও দুসর । দীর্ঘ লাইন । একটা বিষয় আমার চোখ এবং সিক্সেন্সকে কোনভাবেই এড়িয়ে যাচ্ছে না । ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এবং পুলিশ এই দায়িত্বশীল ভাইদের মধ্যে যাত্রীদের নিয়ে যতটা না মনোযোগ তার চেয়ে বেশি মনোযোগ ও তোড়জোড় মনে হচ্ছে ভিন্ন কোন কিছুর সন্ধানে । আমার উপলব্ধি এবং বিশ্বাস এই ইমিগ্রেশন দিয়ে মস্ত বড় উপঢৌকনের আগাম বিনিময়ে অবৈধ যাত্রীদের পার করিয়ে দেয়া হচ্ছে তা আমার চোখ এবং দৃষ্টি শক্তিকে মোটেও এড়াতে পারেনি । ভেতরের অনেক আলাপ জেনেছি, স্বাক্ষী হয়েছি অবৈধ যাত্রী এবং অবৈধ মালামাল পারাপারের অন্তরালের সড়ক এই ঢাকা পোর্ট, যেখানে অপরাধ চক্র বুক উঁচিয়ে বীরদর্পে পারাপার হয়ে যায়, অন্যদিকে কিছু নিরীহ যাত্রী এশিয়া এবং মিডল ইস্ট হতে অতিকষ্টের শ্রম ঘাম ঝরিয়ে কিছু টুকিটাকি মালামাল বস্তা ভরে নিয়ে আসে পরিবারকে খানিক খুশি করার লক্ষ্যে, কিন্তু আইনের বেড়াজাল পড়ে সেই নিরীহ মানুষগুলো অথবা মোটাদাগে বলব রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অত্যান্ত নির্মমভাবে লাঞ্ছনা করে এই পোর্ট কর্তিপক্ষ। ভিসা চেক করে ইমিগ্রেশন সিরিয়াল অতিক্রম করে ফের ইমিগ্রেশন ডেস্ক যেতে দেখি আগের সেই কর্মকর্তা উদাও, ডেস্কে বসা ইমিগ্রেশন পলিশ আবার প্রথম থেকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, কোথায় যাবেন, কেন যাবেন? আগে কয়বার গিয়েছেন? নানান প্রশ্ন । এর মধ্যে এই কর্মকর্তা আবার ইশারা করলেন উত্তর পশ্চিম কোণায় গিয়ে ভিসা টা চেক করে আনুন । ঠিক একি ঘটনা তিন তিনবার ঘটেছে আমার সাথে । এর দুটা কারণ, একটা হলো, এই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বেশিক্ষণ ডেস্কে থাকেন না, অধিকাংশ ডেস্ক খালি, দুয়েকটা ছাড়া । ফলে দীর্ঘ লাইন অতিক্রম করে সময়ের দীর্ঘ সময় অপচয় ঘটিয়ে যখন ডেস্কে আসি তখন ফের নতুন ইমিগ্রেশন ডেস্ক অথরিটি ফেস করি, ফলে এই বিড়ম্বনা ঘটে চলেছে থার্ড টাইম পর্যন্ত । দ্বিতীয় কারণ, আমি স্প্রস্টতই দেখেছি, এই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের তোড়জোড় ভিন্ন কিছুর কলেবর এবং ঠিক ইমিগ্রেশন এক্টিভিটিস এর অন্তরালে ইনভ্যালিড কিছুতে ব্যতিবস্ত থাকতে । থার্ড টাইম আমি ধর্যের শেকড় ছিড়ে বললাম, আপনারা কি ইমিগ্রেশন এর কাজ করছেন নাকি যাত্রীদের সাথে তামাশা করছেন? ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হতবিহ্বল অবয়বে তাকিয়ে আছে- অনেকটা কিং কর্তব্য বিমূঢ় অবস্থা । জবাবে তিনি বললেন কি হয়েছে ভাই? আমি বললাম কি হয়নি ভাই? তিন তিনবার আপনারা একি কাজ আমাকে দিয়ে করাচ্ছেন, আমি এই ইমিগ্রেশন সেন্টারে অলমোস্ট দুই ঘণ্টা, সাথে আরও যাত্রীদের একি অবস্থা, একি ভোগান্তি। আপনাদের কাউকেই ডেস্কে স্থির থাকতে দেখছি না- এটা দুঃখজনক । আমি পোর্টের এই সিচুয়েশন এবং এই ভোগান্তির প্রতিরূপ অনুরূপ মিডিয়ায় প্রকাশ করব এবং রাষ্ট্রকে অবহিত করব । লোকটা আমার দিকে খানিক তাকিয়ে বললো ভাই, যাবেন আর কি, এতো তাড়াহুড় করছেন কেন? এই বলে সকল কাগজ পত্র আবার পোস্টমোটেম করে বললেন ভাই এই নিন বলে আমাকে এই মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি দেয় । আমিও মুক্তি পেয়ে আনন্দিত ।

চার ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্ট আসা বিমান ছাড়ার সময় আর মাত্র আধাঘণ্টা, তবু সস্তি আর নির্ভার লাগছে এই ভেবে যে পরিশেষে একটি কঠিন ও নির্মম সময়ের সড়ক অতিক্রম করে উড়ন্ত সূচনা ঘটবে- এই বিশ্বাসে । কিন্তু, না – সময়ের নির্মমতা কেবল সূচনা হলো এই যাত্রার লক্ষ্য পানে । ব্যক্তি এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক না হলে সর্বক্ষেত্রে ক্রাইসিস অথবা জনভোগান্তি বৃদ্ধি পাবে ।

banner

সম্পর্কিত খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আবুল খায়ের 

নির্বাহী সম্পাদক: 
বার্তা প্রধান:

অফিস: বাড়ি ০৭, সড়ক ১৪/সি, সেক্টর ৪,

উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।

যোগাযোগ: ০১৭১৫৩৬৩০৭৯

বিজ্ঞাপন: ০১৮২৬৩৯৫৫৪৯

Email: khair.hrm@gmail.com

info@dainikprotibimbo.com

protibimboprokash.com

Facebook

©2025 Dainik Protibimbo – All Right Reserved. Designed and Developed by Bangla Webs