খেলা ভাঙার খেলা
শিমুল পারভীন
নিউক্যাসেলের দারুণ পাহাড়ি নদীর মতো রোমান্টিক আশাবাদ আর সহমর্মিতায় স্নান করে মোহিনী মধ্য বয়সে প্রেমে পড়ে মিলন নামের এক প্রবাসীর। হয়তো এটাই ওর জীবনের প্রথম প্রেম। উওর সমুদ্রের জমাটবাধা হিমশিলার দল গলে যেতে থাকে ট্রপিক্যাল উষ্ণতায়।; কিন্তু মোহিনী ভয় লাগে- এই প্রেম ওর সইবে তো!
আর মিলনের মনেও মেয়েদের সর্ম্পকে যে অবাস্তব আশঙ্কা বা প্যারানয়েড ডিলিউশন এসেছিল বহুদিন, মোহিনীই সে ধারণা পাল্টে দিয়ে ওর মনের সব অন্ধকার পুরনো ছবিগুলের উপর ধবধবে সাদা রং লাগিয়ে দেয় সহজ ভালোবাসায়। ওদের দু’জনার মন গেয়ে ওঠে -আজ খেলা ভাঙার খেলা ভাঙ, ভাঙ….
সুমনের সাথে মোহিনীর স্বামী স্ত্রীর যে সম্পর্ক তা পুরনো ভাড়াবাড়ির দেওয়ালের মতোই হয়ে গেছে যেন, তার ফাটল মেরামত করতে যে যত্ন লাগে তাতে মোহিনীর আর আগ্রহ জাগে না। অন্যদিকে মোহিনীতে ও সংসারে মন না থাকলেও সুমনের সবসময়ই খেয়াল ছিল যেন দেওয়ালটা একেবারে ধ্বসে না পড়ে। কারন মাথার ওপর নীতু নামের একুশ বছরের ছাতাটা যে ভেঙে পড়বে তাহলে। আর নীতুও চাইতো সম্পর্কের শীতলতা ঢেকে রেখেই একসাথে জীবন কাটিয়ে দিক ওর বাবা মা শুধু ওর জন্য হলেও।
চেনা পারফিউমের গন্ধে সেদিন মোহিনীর মনের আকাশে উড়ে এসেছিল বহু বছর আগের কিছু সুখ স্মৃতি। ওর মনে হয়েছিল কিছুই হারায়নি জীবনে!
মানুষের মন আর ভাগ্য কখন যে কিভাবে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তা সে একটু আগেও জানেনা। তাই সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে সুমন নীতু ও মোহিনীকে নিয়ে ঢাকা ফিরে যায় নীতুর বার এট ল’ পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রেখেই। মেয়েকে বোঝায় পরীক্ষা সে আবার দিতে পারবে কিন্তু সম্পর্ক একবার ভেঙে গেলে জোড়া দেয়া মুসকিল হবে। মিলনও মানিয়ে নিয়েছিল ওর বিদেশি স্ত্রী মারিয়ার সাথে।পাশ্চাত্যের মানুষ তার মজ্জাগত ডিসিপ্লিন থেকে যুদ্ধ করার শক্তি খুঁজে পায় কিন্তু ও তো ভেতো বাঙালি চাপ নেবার সীমা ও কম। তাই হয়তো মানিয়ে নেয় নিখুঁত অভিনেতার মতো। তবে রিকন্সফিল্ড স্ট্রীট এর ফর্টিন নম্বর বাড়ির সামনে দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে আজও ওর মনে পড়ে বহুদিন আগে মোহিনীর দেশে ফিরে যাবার সে দৃশ্যটা। বৃষ্টিস্নাত কোন বিকেলে ভিক্টোরিয়া পার্কে সেই স্মৃতিময় পাইন গাছটার নীচে বসে মিলন মনে মনে বলে-যদি মন কাঁদে মোহিনী তুমি চলে এসো।