৩১
সাধারণ বাংলার মাথার মুকুট শেরে বাংলা ফজলুল হক
আমিনুল ইসলাম
অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, জমিদারদের অত্যাচার থেকে হিন্দু মুসলিম সকল সাধারণ কৃষকদের মুক্তির অগ্রনায়ক,—জমিদারী উচ্ছেদ আইনের মূলনেতা— শের-ই বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক ২৬ অক্টোবর ১৮৭৩ বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সম্পর্কে বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছিলেন যে তিনি একইসঙ্গে মাথা থেকে পা পর্যন্ত একজন খাঁটি বাঙালি ও খাঁটি মুসলমান।
আদর্শ রাজনীতিবিদ এর বিরল উদাহরণ আবুল কাশেম ফজলুল হক। তিনি গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার মধ্যে অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী (১৯২৩), কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩), পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬-১৯৫৮) অন্যতম। যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। বাংলায় তিনি কৃষক প্রজা পার্টি মাধ্যমে নিচু জাতের হিন্দু ও মুসলমান উভয় কৃষকদের স্বার্থের পক্ষেই সওয়াল করতেন। এমনকি মুসলিম লিগের সঙ্গে কৃষক প্রজা পার্টির লড়াইও চলেছিলো ।
তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ. কে. ফজলুল হক বহু কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেই জোর দিয়েছিলেন বেশি। তার আমলে দরিদ্র কৃষকের উপরে কর ধার্য না করে সারা বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করা হয়। ‘বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ’-এর পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন। এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে ‘ফ্লাউড কমিশন’ গঠন করে। ১৯৩৮ সালের ১৮ আগস্ট বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনী পাস হয় এবং জমিদারদের লাগামহীন অত্যাচার চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়। ১৯৩৯ সালের “বঙ্গীয় চাকুরি নিয়োগবিধি” প্রবর্তন করে মন্ত্রী পরিষদ মুসলমানদের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ চাকুরি নির্দিষ্ট রাখার ব্যবস্থা করে। এ বছরেই ‘চাষী খাতক আইন এর সংশোধনী এনে ঋণ সালিশি বোর্ডকে শক্তিশালী করা হয়। ক্লাউড কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৪০ সালে হক সাহেব আইন পরিষদে “মহাজনী আইন” পাস করান। এ বছরই ‘দোকান কর্মচারী আইন’ প্রণয়ন করে তিনি দোকান শ্রমিকদের সপ্তাহে একদিন বন্ধ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের নির্দেশ জারি করেন। কৃষি আধুনিকায়নের জন্য ঢাকা, রাজশাহী এবং খুলনার দৌলতপুরে কৃষি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাট চাষীদের নায্য মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে ১৯৩৮ সালে “পাট অধ্যাদেশ” জারি করা হয়। ১৯৪১ সালের ১২ ডিসেম্বর আবুল কাশেম ফজলুল হক দ্বিতীয়বারের মত মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। শরৎচন্দ্র বসু ও হিন্দু মহাসভার সহ-সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সঙ্গে প্রগতিশীল যুক্ত পার্টি গঠন করে তিনি সেই দলের নেতা হয়েছিলেন। [ তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ]
বাংলা সাধারণ মানুষের ভাগ্য-উন্নয়নে, কৃষকদের মুক্তি আনয়নে এবং তাদের জন্য আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থাকরণে ফজলুল হকের কোনো তুলনা নেই। বাংলা সাধারণ মানুষ তাঁকে ভালোবেসে “ হক সাহেব ” বলে সম্বোধন করতো।
মেধা, শিক্ষা, আধুনিকতা, অসম্প্রদায়িকতা, স্বজনপ্রীতিহীনতা, সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সততা, সাহস, নেতৃত্ব, সাফল্য, সুনাম— সব মিলিয়ে শের-ই বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক হচ্ছেন “ অতুলনীয় নেতা”। অভিন্ন বাংলার প্রতি ইঞ্চি মাটি, প্রতিটি শস্যের মাঠ, প্রত্যেক সাধারণ কৃষক জেলে কামার কুমার মাঝি— সচেতনে অথবা অচেতনে ধারণ ও বহন করে চলেছে ফজলুল হকের সোনালি ভালোবাসা। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে তাঁর জন্মদিন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হওয়ার কথা কিন্তু হয় না।
এ. কে. ফজলুল হক একজন। একক। অনন্য। অতুলনীয়। তাঁর প্রতি বাংলার আকাশজোড়া শ্রদ্ধা-বাংলার ভূগোল ভরা ভালোবাসা। শুভ জন্মদিন প্রিয় মহান মানুষ ।
