নির্বাচনের প্রতীক্ষায় জাতি: অনিশ্চয়তা ও প্রত্যাশার দ্বন্দ্ব
মো: নজরুল ইসলাম
জাতির সামনে বর্তমানে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ, আলোচিত এবং গভীরভাবে অনুভূত বিষয় হলো—জাতীয় নির্বাচন।সরকার প্রধানের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতাবাণী—কোনো কিছুই জনগণের মধ্যে প্রত্যাশিত আস্থা সৃষ্টি করতে পারছে না।এ যেন দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা ও অবিশ্বাস জাতির মানসপটে স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে বসেছে।
গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শহরের বিনোদন পার্ক পর্যন্ত—সবখানেই একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে: ভাই, নির্বাচন হবে তো? সম্ভব কি? হওয়াই ভালো ? না হলে কী হবে?
প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম; বরং নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না—এই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়।
কুড়িগ্রামের একজন সাধারণ নাগরিক জানান—বিভিন্ন অস্থির পরিস্থিতি দেখে মনে হয় না সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।তিনি বলেন -বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলন, সিলেটে রেললাইন দ্বিগুণ করার দাবি, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, চার্জশিটভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবৃতি, জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে জটিলতা, রাজনৈতিক দলগুলোর হুমকি-ধমকি—সব মিলিয়ে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে নির্বাচন ঘোষিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা দক্ষিণে কর্মরত একজন শিক্ষক জানান—নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন, তবে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাঁর মতে, সরকারের কাছে নির্বাচন ছাড়া গ্রহণযোগ্য কোনো বিকল্প নেই।
সাতক্ষীরার একজন ছাত্র আলোচনাক্রমে জানান – টেলিভিশনে চোখ খুললেই নির্বাচন নিয়ে জন মানুষের ভাবনা গুলোর প্রতিফলন দেখা যায়।
অন্যদিকে, মোহাম্মদপুর থেকে অফিসের কাজে নিয়মিত সিএনজিতে যাতায়াতকারী একজন নাগরিক আক্ষেপ করে বলেন—শহরের রাস্তায় অটো রিক্সার জন্য যেমন গতি কমেছে তেমনি নতুন নতুন দাবি ও আবদার ও উদ্যোগ নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখার কারণ হতে পারে।
এই দ্বিধা, দোলাচল ও অনিশ্চয়তার আবহে জাতি আজ এক জটিল অবস্থায় অবস্থান করছে।নির্বাচন হবে কি না, হলে কেমন হবে—এই প্রশ্নের উত্তরই এখন জাতীয় প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে, যার মেয়াদ ছিল প্রায় তিন মাস। পরবর্তী সময়ে, ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, যার মেয়াদ ছিল ৮৪ দিন।২০০১ সালের ১৫ জুলাই বিচারপতি লতিফুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রায় তিন মাস মেয়াদে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করেন।সর্বশেষ, ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি ড. ফখরুদ্দীন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং প্রায় দুই বছর পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
—————
১৬ অক্টোবর ২০২৫