দুঃখ বোঝাতে এসো না আমায়
দিনা আফরোজ
তুমি কে, যে দুঃখ বোঝাতে চাও আমায়?
দুঃখ কি তোমার ব্যাখ্যার শব্দ?
সে তো আমার বুকের গভীরে জমে থাকা
আঠালো নীরবতার নাম—
যা আমি প্রতিটি নিশ্বাসে বয়ে বেড়াই।
ওগো আত্মম্ভর,
তুমি কি জানো কীভাবে দুঃখ পাড়ি দেয় শরীর?
আমার শাড়ির কুঁচিতে, আঁচলের কারুকাজে,
জমে থাকে সে—চুপচাপ, অথচ বিষাক্ত অভিমানের মতো।
আমার প্রতিটি আঙুলের ফাঁকে
দুঃখের ছায়া বসবাস করে।
সে থাকে ঘামে ভেজা কপালে,
থাকে অলংকারে লুকোনো পুরোনো কান্নার গন্ধে।
তুমি এসে আমাকে দুঃখ বোঝাতে চাও?
যার প্রতিটি হাসি হচ্ছে
একটা ব্যর্থতা লুকোনো সফল অভিনয়?
তোমার স্পর্শহীন সহানুভূতির মুখোশ ছুঁড়ে ফেলো—
কারণ, আমার দুঃখ শুধু অনুভব নয়—
সে আমার আত্মা হয়ে গেছে।
দুঃখের পরিচয় তুমি শিখাতে এসো না আমায়।
আমি তো তাকে প্রতিদিন
আলিঙ্গন করি, পরিধান করি,
আর প্রতিটি নিঃশব্দ রাত্রিতে
তার সঙ্গে ঘুমাতে যাই।
নীরব আত্মমর্যাদা
দিনা আফরোজ
আমি কারও দরজায় অপেক্ষা করি না,
তবু ভালোবাসতে জানি—
তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে কারও ছায়া হয়ে থাকতে পারি,
শুধু নিজের সীমানা ভাঙি না।
আমার আত্মমর্যাদার নাম রেখেছি—নীরবতা।
যা গর্জে না, কিন্তু পাহাড়ের মতো স্থির।
ভালোবাসা চাই, কিন্তু হাত পেতে নয়—
আমি চাই, কেউ এসে
আমার আত্মার পাশে বসুক নিজের ইচ্ছেতে,
না যে হাত টেনে আনবে,
না ঠেলে দূরে সরাবে।
আমি এমন নদী,
যার জলে স্নান করতে চাইলে
তোমাকে নত হতে হবে একটু,
কারণ আমি পথের নিচে গড়িয়ে পড়ি না।
আমার মৌনতা নিঃশব্দ চিৎকার নয়—
ওটা হলো দৃঢ়তা,
যা ভাঙলেও শব্দ করে না,
তবু যার প্রতিধ্বনি বহুদিন থেকে যায়।
আমার ভুল হলে আমি স্বীকার করি,
কিন্তু আত্মসমর্পণ নয়—
আমি নিজেকে সোজা করে রাখি,
কেননা মাথা নত করলে
মেরুদণ্ডও বাঁকা হয়ে যায়।
তাই বলি—
ভালোবাসো, কিন্তু আমার ছায়ায় দাঁড়িয়ে নয়।
আমাকে বুঝতে হলে
নিজেকেও তোমাকে উঁচুতে নিতে হবে।