নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
সুরমা খন্দকার
নাগরিক নিরাপত্তা হলো মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার, যা রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষিত। নাগরিক নিরাপত্তা একটি রাষ্ট্রের মৌলিক স্তম্ভ। এটি নিশ্চিত করতে না পারলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়। বাধাগ্রস্ত হয় স্বাভাবিক চলাচল ও জীবনযাপনের সুযোগও। সঙ্গত কারণেই নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
মানুষের কল্যাণ এবং সমস্যা সমাধানের জন্যই রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে। রাষ্ট্রই মৌলিক মানবাধিকারের রক্ষাকবচ। জনগনকে নিরাপদ রাখা এবং সুষ্ট ভাবে বাঁচতে দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে প্রধান। রাষ্ট্র জনগণের এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে উদ্যত হতে পারে না এবং নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়ে অবহেলা একবারেই অযৌক্তিক। নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি সুস্থ সমাজ ও রাষ্ট্রের স্তম্ভ। রাষ্ট্র যখন নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তখন মানুষ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শান্তি এবং নিরাপদ অনুভব করে। সাম্য বলতে বোঝায় সমাজের ধনী-দরিদ্র, সবল-দুর্বল ,ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই সমান এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
সকলের জন্য একই আইন প্রযোজ্য। কিন্তু মনুষ্য সমাজে যেভাবে অপহরণ, গুম, খুন, ব্যভিচার, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, সন্ত্রাসবাদ চলে, তাতে সর্বস্তরে, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, এতে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির চরম ব্যাঘাত হয়। তেমনি সামাজিক কর্মকান্ডে নাগরিক নিরাপত্তার দারুণ ভাবে ব্যাঘাত ঘটে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যেমন করণীয় আছে তেমনি নাগরিকের ও কর্তব্য রয়েছে।
এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, সারা দেশেই অপরাধ কর্মকান্ড বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। চুরি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, খুন, ডাকাতি ও অপহরণ বেড়েছে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে হলে রাষ্ট্র নাগরিকের ওপর যথাযথ মনোনিবেশ করতে হবে। আইন শৃঙ্খলার যথেষ্ট উন্নয়ন প্রয়োজন। সে জন্য বৈষম্যমুক্ত একটা সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সুশিক্ষা এবং ধর্মীয় অনুভূতির উপর শুদ্ধাশীল হতে হবে।
তাছাড়া নাগরিকের সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা, ধর্মীয় এবং সামাজিক নৈতিকতা নাগরিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে সহযোগিতা করে। দেশের সামগ্রিক উন্নতি সাধিত হতে হলে অবশ্যই নাগরিক নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের বিকল্প নেই। তাই নাগরিক নিরাপত্তা শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয় বরং সমাজের প্রতিটি নাগরিকের, সমগ্র সমাজের।
এটি ঠিক যে সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না, যে কারণে সমাজে খুনখারাবিসহ অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতির কারণ কী? কেন খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না? কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না নৃশংসতা, অমানবিকতা? পেশাগত অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর কারণেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এটা সত্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে অনেক থানায় হামলা হয়। অস্ত্র, গোলাবারুদ লুট হয়। কয়েকটি কারাগারেও হামলা হয়। অস্ত্র লুটের পাশাপাশি অনেক অপরাধীও বের হয়ে যায়। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর একটি দীর্ঘ সময় পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। ফলে দেশব্যাপী অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে।
একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম হলো- তার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নাগরিক নিরাপত্তা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় নয়, বরং এটি একটি সমাজের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের ভিত্তি। প্রতিটি নাগরিককে আইন মেনে চলতে এবং অপরাধ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে। অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ এ দেশ আমাদের সবার। এ দেশকে রক্ষা করতে হবে।
সুরমা খন্দকার : কবি ও কলাম লেখক।