১০ বছর আগে বিএনপি কর্মী হত্যা: সাবেক এমপিসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
মামলায় বলা হয়, জাহাঙ্গীরকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এক দশক আগে এক বিএনপি কর্মীকে হত্যার অভিযোগে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নাসহ আওয়ামী লীগের ৪৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
গত ২৬ জানুয়ারি নিহত জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী রোজিনা খাতুন বাদী হয়ে কামারখন্দ আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী এস এম নাজমুল ইসলাম জানান।
নিহত জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৬) সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
আইনজীবী নাজমুল বলেন, “আদালতের বিচারক কামারখন্দ থানাকে মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ এবং ৪ থেকে ৫ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।”
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সদর উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ পৌরসভার অপসারিত মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জানপুর এলাকার মো. আলম, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আজিজল তালুকদার, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাকিম ও সয়দাবাদ ইউপির অপসারিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নবীদুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিএনপি কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে আসামিদের রাজনৈতিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব ছিল। এ অবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আলম ও সয়দাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম রাজা জাহাঙ্গীরের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। জাহাঙ্গীর চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা তাকে মারধর, হত্যা ও গুম করার পরিকল্পনা করতে থাকে। এ অবস্থায় ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে জাহাঙ্গীরকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি সয়দাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নবীদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী রোজিনা খাতুনের মোবাইল ফোনে কল করে তার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানান। তাকে জীবিত ফিরে পেতে হলে ১৫ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন তারা। এ অবস্থায় ওই বছরের ৭ ও ৯ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় নবীদুল ইসলামের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেন মামলার বাদী। এরপরও জাহাঙ্গীরকে মুক্ত করতে আসামিরা টালবাহানা করতে থাকে।
পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ওভারব্রিজের দক্ষিণ পাশে স্বামীর মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পান বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়, জাহাঙ্গীরকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একই দিন ঝাঐল ইউপির দফাদার সচিন চন্দ্র দাস বাদি হয়ে কামারখন্দ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে আসামি সনাক্ত না করেই আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।
ঘটনার পরই বাদী মামলা দায়ের করতে চাইলেও আসামিরা তাকেও হত্যার হুমকি দেওয়ায় ওই সময় মামলা করতে পারেননি বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন বাদী রোজিনা খাতুন।