স্বপ্ন
মনীষা কর বাগচী
নীলাঞ্জন আজ খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে জানো? সারাদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরেছে আমার উত্তাল সমুদ্র সৈকতে।
—কেন?
—অতীত আমাকে বড্ড কষ্ট দেয় গো। অনেক ভাবি আর পিছন ফিরে তাকাবো না। যে দিন গেছে সে তো একেবারেই গেছে! স্মৃতিসৌধে মাথা খুঁড়ে কীইবা লাভ বল?
—হুম।
—আজ সারারাত তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। সে স্বপ্নে ভোরের কুয়াশা ছিল না। ছিল না ধূসর বিকেলের সূর্যাস্ত। জীবনের বাঁকে বাঁকে হোঁচট খাওয়া পরাজিত সৈনিক ছিল না সেখানে। সেখানে ছিল সদ্য প্রস্ফুটিত দুটি গোলাপ কুড়ি। প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া দুটি তাজা তরুণ প্রাণ।
—-সত্যি বুঝি?
—একদম সত্যি।
— ভালো করে বলনা কী দেখলে?
— দেখলাম আমি কিশোরী লাউলতা। লজ্জায় রাঙা হই তোমার পায়ের শব্দে। এক একটি মুহূর্ত বড় উৎকণ্ঠায় কাটাই কখন তুমি আসবে। আর তুমি এলে লজ্জায় ভালো করে তাকাতেও পারি না । কালো মেঘের মতো গভীর নিস্তব্ধ তোমার দুটি চোখে প্রাণপনে ডুবে যেতে চাই আমি। হারিয়ে যেতে চাই তোমার উচ্ছলিত ঝর্ণায়। কিন্তু পারিনা কিছুতেই পারিনা।
—কেন পারোনা? বলনা মিষ্টি কেন পারোনা? সেই সোনালী মুহূর্তটুকু যাপন করব বলেইতো বারবার ছুটে গেছি বুনো গন্ধ মাখা তোমার সবুজ আঙিনায়।
— বিবর্ণ ঝরা পাতার স্তুপ সরিয়ে সরিয়ে কখন যেন সামনে এসে দাঁড়ালে তুমি! এক ছুটে দৌড়ে চলে এলাম ঘরে। পিছনে পিছনে তুমিও এলে। পরম আদরে দুহাতে তুলে ধরলে আমার লজ্জা রাঙ্গা কৃষ্ণচূড়া তোমার গভীর সমুদ্রের সামনে। আমার প্রজাপতি চোখ দুটি কিছুতেই পাখা মেলতে পারছে না। তুমি তখন বললে…
—মিষ্টি ?
—হুম
—তাকাও আমার দিকে। প্রজাপতিরা মেলুক পাখা। ওদের উড়তে দাও। ওরা বাঁচুক। বাঁচার অধিকার সকলেরই আছে। এই পৃথিবীতে কত সুখ আছে, কত শান্তি আছে, কত ঢেউ আছে দেখো। ভালোবেসেছ ভয় কিসের? তুমি তো কোনো অপরাধ করোনি।
—পারছি না। আমি পারবো না গো। ডুবতে পারবো না তোমার ঐ চোখে।
“আচ্ছা ডুবতে হবে না”, বলেই আদিগন্তের আতর মাখা তোমার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলে আমার চোখে, গালে, কপালে। স্বর্গ সুখে কেঁপে উঠল আমার স্বপ্ন মাখা স্থলপদ্মদ্বয়। সেই স্পর্শ সুখটুকু নিয়ে আমি একজন্ম কেন সাতজন্ম বেঁচে থাকতে পারবো।
—বাহ! ভারী সুন্দর স্বপ্ন তো। আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। ভালো লাগা মেখে দিলাম তোমার সমস্ত আকাশে। ভালো থেকো সোনা।
—হ্যাঁ, ভালোই তো আছি। চারিদিকে অতলান্ত জলরাশির মাঝে এক নির্জন দ্বীপের মতো ভালো আছি।
—অমন করে বলোনা প্লিজ…
—ভয়াবহ অন্ধকার রাতে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের মতো বাঁশি বাজে আমার সমস্ত জীবন জুড়ে। তবুও ভালো থাকবো আমার স্বপ্নদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে। চিন্তা করোনা।