ঋতুরাজ শরৎ মানুষ ও সৃষ্টির মননে উচ্ছ্বাসে বোনা এক আরাধ্য ঋতু।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মানুষ ও সৃষ্টির কলস্বরে অবতরণ করলো ঋতুরাজ শরৎ । ঋতুরাজ বা শরৎরানী যে নামেই ডাকি না কেন, মহান স্রষ্টার এক অপূর্ব ও অভূতময় কাল হলো ঋতুরাজ শরৎ । শরৎ শুধুমাত্র মানুষের মনে হৃদস্পন্দন ঘটায় না, বরং সকল প্রাণ এবং প্রকৃতির মননে সহজাত বৈশিষ্টের এক ভিন্নমাত্রার অনুভূতি ও উচ্ছ্বাস প্রবাহিত করে।
বর্ষার ক্লান্তিহীন রিমঝিম আলোড়নের শেষেই শরৎরানী দুই সহোদর ভাদ্র-আশ্বিন কে নিয়ে এসে এক নিখাদ শান্ত মননে প্রকৃতিস্থ অবয়ব শীতল প্রাণবন্ত আমেজ সৃষ্টি করে।
অনাদিকাল হতে শরতের সাথে মাতৃকার মাটি ও মানুষের নিবিড় এক প্রাণবন্ত রসায়নের সখ্যতা রয়েছে, অপেক্ষমান থাকা প্রকৃতির সকল প্রাণোচ্ছ্বাসে এক সারল্য কলেবর তৈরি করে এই শরৎ ।
শরতের প্রতিটি ভোর দিনের আবরণে প্রবেশ করে ভিন্ন ভিন্ন রূপে বহুমাত্রিক সাজে অবতরণ করে । কখনো কখনো সবুজ ঘাসের ডগায় ডগায় জড়ো হওয়া কুয়াশার চোখ চিকচিক করে মণিমুক্তর মতো, পুবের উদিত সুরুজ তার রশ্মি দিয়ে তার পরিচয় প্রকাশ ঘটায় । আবার কখনো কখনো ঝিরঝির বাতাসের ফাঁক গলে নামে বৃষ্টির শান্ত জলধারা, পল্লবিত হয় পত্রশাখা, কুসুমিত হয় বাহারী রকমের ফুল ।
গাছের পাতবাহার দোল খায় হিমশীতল বাতাসের খুনশুটিতে, পাখিদের রকমারি ডাকে জেগে উঠে ভোরের চোখ । পথচলা সড়কের দুদার ঘেষে শিউলি ফুলের আয়েশি দোল তৈরি করে ভিন্ন আমেজ, মানবাত্মার সঞ্চার করে নবউদ্দম কর্মস্পৃহা, ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ সবুজাভ এক মানচিত্রের আকার ধারণ করে, দিনের কর্মযজ্ঞে কখনো বৃষ্টির শান্ত ধারা, আবার কাঁচা রোদের প্রলেপ প্রকৃতি এবং মানুষের অন্তরের অন্তরালে এক প্রশান্তির আমেজ নির্মাণ করে ।
শরতের গন্ধে শিউলি, শাপলা, জারুল, জুঁই, জবা, কামিনী, মালতী আর কাশফুলের চাদর দোল খায় তৃপ্ত আমেজে, কিছুটা ভোরের শরীরে শীতের চাদর, শিউলি আর কাশফুলের আয়েশি ঢং শরৎকে তুলে ধরে ভিন্ন পরিচয়ে ।
নদীর দুদার বিলে ঝিলে ফোটে কাশফুল, আয়েশি ঢঙ্গে দোল খায় যেন আকাশ পাড়ে সাদা মেঘের পায়চারী ।
নির্মল আকাশ থাকে নীলে আচ্ছন্ন শান্ত মেজাজে, কখনো কখনো মেঘের সাদা খণ্ড এসে আকাশকে দেয় চাদর পরিয়ে ।
দিনের কর্মযজ্ঞে গরম রোদের প্রলেপ থাকলেও রাতের মেরুদণ্ডে আনাগোনা করে হিমশীতল বাতাস, অনেকটা শান্ত শীতের এক নাতিশীতোষ্ণ অনুভূতি ।
নদী খালে বিলে ঝিলে স্বচ্ছ পানি থাকে শান্ত মেজাজে, শাপলা ফুলের বিছানায়, সুশোভিত করে প্রকৃতির চারপাশ।
রাত ও দিন সমানুপাতিক সময়ের ধারায় চলে সমানতালে।
গাছের পাতার রং সাজে হলুদ বাদামী কমলা রঙে, নিঃশব্দে ঝরে পড়ে প্রকৃতির ছায়ায় ।
কৃষকের ধানের ফসল পেকে উঠোন ভরার উপযুক্ত সময় এসে পড়ে, তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকা কৃষাণের মনে ফিরে পায় স্বস্তির ভাঁজ, জেগে উঠে প্রানবন্ত উচ্ছ্বাস ।
তাই, ঋতুরাজ শরৎ মানুষ ও সৃষ্টির মননে উচ্ছ্বাস বোনা এক আরাধ্য ঋতু, নবউদ্দমে জেগে উঠা মানুষ ও প্রকৃতির ঋতু, ঋতুরাজ শরৎ ।