প্রেমঘাতের বিষবৃষ্টি
প্রফেসর ডক্টর মোঃ মতিউর রহমান
পরিচালক, আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট
তুমি বলেছিলে “ভালোবাসি”—
সেই শব্দটি তখন মনে হয়েছিল ঈশ্বরের কণ্ঠ,
তোমার প্রতিটি ছোঁয়ায় আমি খুঁজেছিলাম
চিরন্তন শান্তির আকাশ।
ভেবেছিলাম, তুমি সেই আশ্রয়,
যেখানে ঝড়েরও সাহস হয় না ঢুকতে!
কিন্তু তুমি ছলনার এক নির্মম তীর ছুঁড়েছিলে,
নির্বাক করে দিলে আমার সমস্ত বিশ্বাসকে।
তুমি ছিলে আমার সর্বস্বের প্রতীক,
আমি তোমাকে দেখতাম পবিত্র আরাধ্য রূপে,
তোমার ভালোবাসাকে পবিত্র প্রার্থনার মতো
জপতাম প্রতিদিন।
তোমার স্পর্শে গলে যেত হৃদয়ের জমাট বরফ,
তোমার হাসিতে আলো ছড়াত অন্ধকারেও।
কিন্তু একদিন, হঠাৎ করেই বদলে গেলে তুমি!
কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই
চলে গেলে ঝড়ের মত, বজ্রপাতের চিৎকারে।
তুমি চলে গেলে এক ভয়াবহ নীরবতা ফেলে—
যেখানে আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে জমে ওঠে বিষ।
তুমি শুধু চলে যাওনি—
তুমি আমার আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে গেলে।
একটি হৃদয় নয়, একটি মহাবিশ্ব ভেঙে দিলে তুমি!
আমি এখন আগুনে পুড়ে যাওয়া
এক বিধ্বস্ত ট্রয় নগরী,
যার প্রতিটি ধ্বংসস্তূপে জমে আছে
আত্মঘাতী এক প্রেমের উপাখ্যান।
যেখানে আগে ভালোবাসার নদী বইতো,
এখন সেখানে ছাইয়ের কুয়াশা।
যেখানে ছিল গান, ছিল আলোর সুর—
এখন শুধু নিঃশব্দ বিষাদের কফিন।
আমার বুকের গভীরে
একটা ঘড়ি আটকে আছে
তোমার চলে যাওয়ার মুহূর্তে।
সেই থেকে সময় থেমে গেছে আমার জীবনে।
দিন আসে, রাত নামে—
কিন্তু আমি শুধু গুনে যাই
তোমার না-ফেরার হিসেব!
আমার চোখ আর জল ঝরায় না—
ওখানে এখন ক্ষয়ে যায় বিষক্রিয়ার কণা,
ঘন ঘন বিষ জমে,
ঘন ঘন জ্বলে ওঠে মৃত্যুর আগুন।
তুমি শুধু প্রেমঘাতিনী নও,
তুমি এক অণুবিস্ফোরণ,
যা একবার বিস্ফোরিত হলে
ভস্ম করে দেয় জীবন নামের নগর।
লোকে ভাবে, আমি সুন্দর করে বেঁচে আছি—
আলোয়, শব্দে, হাসির অভিনয়ে।
কিন্তু আমি জানি,
আমি গোপনে পান করে ফেলেছি
তোমার প্রতারণার নীল বিষ—
যা কোনো মৃত্যু নয়,
বরং এক অনন্ত জীবন্ত মৃত্যুর শাস্তি।
তুমি যেদিন চলে গেলে,
সেই দিন আমার আত্মা হয়ে গেছে খণ্ড-বিখণ্ড,
আর আমার জীবনের আয়না—
চিরতরে ভেঙে গেছে
তোমার অসীম নির্মমতায়।
আমি আজ আর মানুষ নই,
আমি এক কাব্যিক ধ্বংসস্তূপ,
যার প্রতিটি ছন্দে
রক্তঝরা ইতিহাস।