পথ শিশুর সাথে ঈদ আনন্দ। নিবন্ধ। এম আলী হুসাইন।

সাহিত্য

by protibimbo
০ মন্তব্য ১২৮ বার পড়া হয়েছে

পথ শিশুর সাথে ঈদ আনন্দ
– এম আলী হুসাইন।

ঈদ চলে গেছে। এই ঈদ আর আমাদের জীবনে বা কারো জীবনে আসবে না। যা অনেক দূর, অতীত কে তো আর কাছে বলা যায় না, অতীত দূরে মানেই দূরে। সে দিন আর আজকের দিন নয়। তবে ঈদ আনন্দ লেগে থাকে পুরুটা বছর বা পুরুটা জীবন। কখনো স্মৃতি হয়ে, কখনো আবেগ হয়ে আবার কখনো দুঃখ বেদনা হয়ে ঈদের স্মৃতিগুলো আমাদের বারবার কাছে টেনে রাখে।

আজ এপ্রিলের দুই তারিখ মানে ১৪৪৬ হিজরীর ঈদুল ফিতরের তৃতীয়দিন। বিকালে বের হয়েছি গাজীপুর চৌরাস্থায়। একটু দেখব ছুটির দিনে গাজীপুর শহর কেমন লাগে?

চিরচেনা শহরটিতে তেমন লোক চলাচল নেই। নিরব নিস্তব্ধ শহর। হাতে গুনা কিছু গাড়ী আর দোকান-পাট রয়েছে। ক্রমে যেমন দোকানগুলো খুলছে তেমনি গাড়ীর সমাগম বাড়ছে আবার লোক সমাগম দেখছি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ী যায়নি এখনো বিশ শতাংশের মানুষ শহরে থেকে গিয়েছে। বেশী সময় যায়নি আছর থেকে মাগরীব এই সময়ের ভিতরে দেখা গেল অনেক মানুষ।

banner

ছোট বড় অনেক দোকান খোলা হল, গাড়ীর সংখ্যা ও বৃদ্ধি পেল। চিরচেনা গাজীপুর আস্তে আস্তে মানুষের সমাগমে ভরে গেল। মনে হল কেউ ই বাড়ীতে যায়নি, সবাই নিজ নিজ বাসায় বিশ্রামে ছিল এখন সকলে মিলে শহরে আসছে।

একা একা ঈদ আনন্দের অনুভূতি ভিন্ন রকম, চেনা শহরে অচেনা মানুষের মাঝে চলাফেরা করার মজাই আলাদা। আজ শুধু হাটব। মন খোলে মানুষদের দেখব। কত জাতের ও কত প্রকারের মানুষ পৃথিবীতে বাস করে। মানুষের জাত ও প্রকারের কোন শ্রেণী আছে কি? অসীম অসংখ্য অগনিত তাদের প্রকারভেদ। তবে সবাই মানুষ। এই সত্য চির সত্যকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারো নেই।

ঈদের আগের দিনগুলোর মত গাড়ী না থাকলেও সংখ্যায় কম নেই। তাদের প্রতিযোগিতা চলছেই। কে কার আগে যাবে? অটো, সি এন জি, পিকাপ, ভ্যান আর বাসের সারি সারি লাইন মনে হয় এখন ই জ্যাম লেগে যাবে। আর জ্যাম মানেই ঘন্টা দেড়ঘন্টা বা আধাঘন্টা বিরতি নেওয়া। সময় চলে যাওয়া। কিন্ত আজ আর গাড়ী আরোহনের ইচ্ছা নেই। মন চাইল খোলামেলা দীর্ঘপথ হাটাহাটি করব।

সন্ধা সাতটার দিকে মালেকাবাড়ীর উদ্দেশ্য গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হাটা শুরু করি, নিচক একা একা হাটছি আর জগত ও জগতের মানুষগুলো দেখছি, কেউ আসছে, কেউ যাচ্ছে, পায়ে হেটে চলার মানুষ ও অনেক। কারো পথ চলা লাভের আর কারো পথচলা বেকার, কেউ চলছে একটু শান্তির আশায় আর কেউবা কোন টার্গেট ছাড়াই দৌঁড়ায়।

এইভাবে মিনিট দশ এক পায়ে হেটে পৌঁছে যাই বাইপাস। কিছুটা বিরতি নিব ও জালমুড়ি খাব আশা করে ডানে বামে থাকাই। কিন্তু কোন জাল মুড়ির দোকান চোখে পড়ে না। শুধু হালিম আর ফুসকার দোকান দেখতে পেলাম। কি আর করা যায়। হালিম খেয়ে নেওয়ার ইচ্ছা করে সারি সারি হালিমের দোকানের কাছে যাই। দেখি একটি দোকানে খুব বেশী হালিম বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলাম, ভাই হালিম প্রতি প্লেট কত?
সে বললঃ নিম্নে ৪০ আর সর্বোচ্ছ ৭০ টাকা প্রতিপ্লেট।
মুটামুটি খাওয়ার উপযুক্ত দেখে একটি আসন দখল করে বসি।

ঠিক তখন ছোট একটি শিশু হালিম খেতে চায় বলে আমাকে জানায়। ছেলেটির নাম আশরাফুল, বাড়ী রংপুর। ঈদে বাড়ীতে যায়নি। তার বাবা থেকেও নেই। কেননা তারা দুই ভাই ও একবোনকে রেখে তাদের বাবা আরেকটি বিয়ে করেছে। এখন তাদের খাবারের দায়িত্ব কে নিবে?

মা চাকুরী করে,তিন সন্তান নিয়ে শহরে বাস করা তাদের কত কষ্ট যা ওরা ছাড়া আর কেউ জানেনা। তার কথার ভঙ্গি আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমার ভালো লাগে, আমার সাথে তাকে বসিয়ে দিলাম

দুই প্লেট হালিমের অর্ডার করলাম, তাহার মনটা হাসিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। মনের আনন্দ চেহারায় ফুটে উঠল। আমি ভাবলাম ও নাকি পথ শিশু! হুম আবার না। কেননা তার বাসা আছে, লোকেশন আছে, মা আছে, বাবা থেকেও নেই।

দুইজন পাশাপাশি বসে গল্প করছি, এমন সময় সে আমাকে ইঙ্গিত করে আমার পিছনে থাকা আরেকটি ছেলের জন্যে। জানতে চাইলাম কে সে? সে মুচকি হেসে বললঃ তাহার ভাই। ওর না মুন্না। মুন্না বড় আর আশরাফুল ছোট। তারা লেখা পড়া করে না। সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। মা-বাবাও তাদের লেখা পড়ার সুযোগ করে দেয়না। তাদের মনে অনেক দুঃখ।

না করতে পারিনি, দুইজনকেই হ্যাঁ করে দিলাম। বস তোমরা পাশে। খেয়ে নাও হালিম।অর্ডার করা হল। ভাই সুন্দর করে হালিম বানিয়ে দিলেন।

আহারে কি সুখ, কি আনন্দ দুই ভাইয়ের মাঝে। পথশিশুরা কি একটু সুখে এত মন খোলে হাসতে পারে? আমি অপলক থাকিয়ে রহিলাম তাদের দিকে। সেলফি ক্যামেরায় বন্দি করে নিলাম তাদের। ঈদের আনন্দ খুঁজে পাইলাম সেই দুই শিশুর মুচকি হাসির মাঝে।

লেখা শেষ করতে চাই কবির ছন্দমালা দিয়ে, কবি বলেনঃ
“সবার সুখে হাসব আমি
কাঁদব সবার দুঃখে।
নিজের খাবার বিলীয়ে দিব অনাহারির মূখে”

সম্পর্কিত খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আবুল খায়ের 

নির্বাহী সম্পাদক: 
বার্তা প্রধান:

অফিস: বাড়ি ০৭, সড়ক ১৪/সি, সেক্টর ৪,

উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।

যোগাযোগ: ০১৭১৫৩৬৩০৭৯

বিজ্ঞাপন: ০১৮২৬৩৯৫৫৪৯

Email: khair.hrm@gmail.com

info@dainikprotibimbo.com

protibimboprokash.com

Facebook

©2025 Dainik Protibimbo – All Right Reserved. Designed and Developed by Bangla Webs