নিঃশব্দে চলে যাব
নার্গিস পারভীন
আমি যেদিন হারিয়ে যাব
সেদিন কোনো শব্দ হবে না
শিশিরের মত নিঃশব্দে
কখন কিভাবে যাব
কেউ জানবে না।
চারদিকে ঝলমল করবে কিশোর রোদ্দুর,
আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা
বাতাসে বইবে উৎসবের রমনীয় সুগন্ধ,
অঙ্গন জুড়ে ঝরে পড়া শিউলিরা
হয়তো তখনো থাকবে তরতাজা!
অথচ আমি থাকবো না,
হারিয়ে যাব একান্ত নিঃশব্দে।
বিষন্নতার বাকরুদ্ধ অনিয়ম যখন
আমাকে টুকরো টুকরো করে দেবে,
অভিমানে হারিয়ে যাবে না বলা অনুভূতিগুলো
ভাষার প্রচন্ড অভাবে–
আমি নিঃশব্দে হারিয়ে যাবো।
তখনো সোনালী রোদের চাদর মুড়ি দিয়ে
একেকটা দিন আসবে,
রূপালী জোৎস্নার মখমলে বিছানায়
আরো অন্তরঙ্গ হবে তুমিও,
চরম প্রশান্তি নিয়ে পেরিয়ে যাবে একটা একটা রূপালী রাত
সোনালী সকাল,
কোন কিছুই ভিন্ন হবে না কিছুতে,
দারুচিনির মত শুকনো হতে হতে
কখন ঝরে গেলাম
হয়তো কেউ জানবে না,
কেউই খুঁজবে না আমাকে,
আমার শূন্যতায় কেঁদে উঠবে না কোনো চোখ!
অথচ কোনো একদিন ছিলাম
এটুকু ভেবে উদাস হবে তুমি
ক্ষণিকে কিংবা মাঝে মধ্যে,
আবার একটা দিন আসবে
রোদ আর মেঘের লুকোচুরি খেলার মতো করে
জোৎস্নায় ঝলমল করে উঠবে
তোমার সেই প্রিয় মুখখানি,
শরীর জুড়ে নরম আলোর মায়াবী স্বপ্ন এঁকে
তুমি সেদিন দুরন্ত প্রেমিক হয়ে উঠবে!
“তোমার মতো প্রেমিক কেউ হবে না”–
খুব আদর জড়ানো গলায় তোমার কানে মুখ রেখে বলবে কেউ,
তুমি বারবার শুনতে চাইবে সেই কথাগুলো,
তোমার মধ্যের শিহরণ বেড়ে হবে দ্বিগুণ,
নিমেষে সজোরে টেনে নেবে বুকের মধ্যিখানে–
উঠোন জুড়ে তখনো মায়াবী রাতের উপঢৌকন,
খেয়ালী জোৎস্না,
আকাশ জুড়ে নাম না জানা কত তারা,
চারপাশ জুড়ে শিশির, জোনাকির পাখায় ক্লান্তির ছায়া,
শিশিরের সাথে ঝরতে থাকবে হয়তোবা অজানা কোনো বেদনা,
আর তোমার সন্তুষ্টির আঁশটে গন্ধ ঘাম!
সেদিনও পৃথিবীর সব নিয়ম থাকবে,
তুমি থাকবে, তোমার প্রিয় মানুষটিও থাকবে,
ভুলে যাওয়ার মতো একটা মনও থাকবে তোমার,
শুধু থাকবে না শিশিরের মতো নিঃশব্দে চলে যাওয়া
কোনো একটি মানুষ,
তোমার অর্ধচেনা কোন মুখ!
কোন শব্দ না করেই চলে যাওয়া
সেই মুখখানি
রেখে যাবে না কোন অভিযোগ!
সমস্ত অভিযোগের চৌকাঠ পেরিয়ে
শুধু নিঃশব্দে চলে যাবে!!