না ফেরার দেশে নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার

জার্মান প্রতিনিধি

by protibimbo
০ মন্তব্য ১৮৮ বার পড়া হয়েছে

না ফেরার দেশে নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার

বার্লিনে কবি দাউদ হায়দার একা থাকতেন। স্ত্রী সন্তান কিংবা পরিবানের একান্ত কাছের কেউ না থাকায় তার খোঁজখবর পেতে খুব বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান বার্লিনে কবির নিকটজন সংস্কৃতিকর্মী, শিল্পী মাইন চৌধুরী পিটু। তিনিই প্রথম কবির কোন খোঁজ না পেয়ে কমিউনিটির সবাইকে জানান। স্থানীয় পুলিশ ও হাসপাতালে গিয়ে কবির বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, ‘কবির ভাল-মন্দ, অসুখ-বিসুখ, সুখে-দুখে চেষ্টা করেছি কাছে থাকতে। কবির কোনো শত্রুও ছিল না। তিনিসহ বার্লিনের অন্যান কাছের স্বজনরা কবির শারিরীক সুস্থতার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খবরাখবর রাখছেন ‘

কবি ও সাংবাদিক দাউদ হায়দার দেশের ভাষা আন্দোলনের বছর ও মাস ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী পাবনা জেলার সদরের দোহারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তারপর থেকে তার লেখনির মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। কিন্তু তার লেখা ও কবিতার জন্যই ১৯৭৪ সালেই তাকে দেশ ছাড়তে হয়। সেসময় তাকে জার্মানির নোবেলজয়ী লেখক, কবি ও সাহিত্যক প্রয়াত গুইন্টার গ্রাস ও দেশটির তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স ডিটরিখশ গেনশের জার্মানিতে নিয়ে আসেন। তারপর থেকেই কবি জার্মানির বার্লিনেই নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন।

দাউদ হায়দার একজন বাংলাদেশী বাঙালী কবি, লেখক ও সাংবাদিক, যিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে দেশ থেকে নির্বাসনের পর থেকে প্রথমে তের বছর ভারতে ও ১৯৮৭ থেকে জার্মানীতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। তিনি বর্তমানে একজন ব্রডকাস্টিং সাংবাদিক।[] তিনি বাংলা ভাষার একজন আধুনিক কবি যিনি সত্তর দশকের কবি হিসাবে চিহ্নিত। তার একটি বিখ্যাত কাব্যের নাম “জন্মই আমার আজন্ম পাপ”।

banner

যে কবিতার জন্য নির্বাসনে গেলেন।

জন্মই আমার আজন্ম পাপ
দাউদ হায়দার

তার একটি বিখ্যাত কবিতা…
জন্মই আমার আজন্ম পাপ, মাতৃজরায়ু থেকে নেমেই জেনেছি আমি
সন্ত্রাসের ঝাঁঝালো দিনে বিবর্ণ পত্রের মত হঠাৎ ফুৎকারে উড়ে যাই
পালাই পালাই সুদূরে
চৌদিকে রৌদ্রের ঝলক
বাসের দোতলায় ফুটপাতে রুটির দোকানে দ্রুতগামী
নতুন মডেলের
চকচকে বনেটে রাত্রির জমকালো আলো
ভাংগাচোরা চেহারার হদিস
ক্লান্ত নিঃশব্দে আমি হেঁটে যাই
পিছনে ঝাঁকড়া চুলওয়ালা যুবক। অষ্টাদশ বর্ষীয়ার নিপুণ ভঙ্গী
দম্পতির অলৌকিক হাসি প্রগাঢ় চুম্বন
আমি দেখে যাই, হেঁটে যাই, কোথাও সামান্য বাতাসে উড়ে যাওয়া চাল-
অর্থাৎ আমার নিবাস।
ঘরের স্যাঁতসেতে মেঝেয় চাঁদের আলো এসে খেলা করে
আমি তখন সঙ্গমে ব্যর্থ, স্ত্রীর দুঃখ অভিমান কান্না
সন্তান সন্তুতি পঙ্গু
পেটে জ্বালা, পাজরায় তেল মালিশের বাসন উধাও-
আমি কোথা যাই? পান্তায় নুনের অভাব।
নিঃসংগতাও দেখেছি আমি, উৎকন্ঠার দিনমান জ্বলজ্বলে বাল্বের মতোন
আমার চোখের মতো স্বজনের চোখ-
যেন আমুন্ড গ্রাস করবে এই আমাকেই
আমিই সমস্ত আহার নষ্ট করেছি নিমেষে।
শত্রুর দেখা নেই, অথচ আমারি শত্রু আমি-
জ্বলন্ত যৌবনে ছুটি ফ্যামিলি প্ল্যানিং কোথায়
কোথায় ডাক্তার কম্পাউন্ডার
যারা আমাকে অপারেশন করবে?
পুরুষত্ব বিলিয়ে ভাবি, কুড়ি টাকায় একসের চাল ও অন্যান্য
সামান্য দ্রব্যাদী মিলবে তো?
আমার চৌদিকে উৎসুক নয়ন আহ্লাদী হাসি
ঘৃণা আমি পাপী
এরা কেন জন্ম নেয়?
এরাই তো আমাদের সুখের বাধা অভিশাপ।
মরণ এসে নিয়ে যাক, নিয়ে যাক
লোকালয়ের কিসের ঠাঁই এই শত্রুর?
-বলে
প্রাসাদ প্রেমিকেরা
আমিও ভাবি তাই, ভাবি নতুন মডেলের চাকায় পিষ্ট হবো
আমার জন্যই তোমাদের এত দুঃখ
আহা দুঃখ
দুঃখরে!
আমিই পাপী, বুঝি তাই এ জন্মই আমার আজন্ম পাপ।

সম্পর্কিত খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আবুল খায়ের 

নির্বাহী সম্পাদক: 
বার্তা প্রধান:

অফিস: বাড়ি ০৭, সড়ক ১৪/সি, সেক্টর ৪,

উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।

যোগাযোগ: ০১৭১৫৩৬৩০৭৯

বিজ্ঞাপন: ০১৮২৬৩৯৫৫৪৯

Email: khair.hrm@gmail.com

info@dainikprotibimbo.com

protibimboprokash.com

Facebook

©2025 Dainik Protibimbo – All Right Reserved. Designed and Developed by Bangla Webs