আজ বৃহস্পতিবার তিনটি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে, ভারতীয় তেল শোধনাগারগুলো রাশিয়ার তেল আমদানি কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে সাহায্য করার জন্য ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু ভারত এই তথ্যকে অসত্য বলে জানিয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারতীয় তেল শোধনাগারগুলো রাশিয়ান তেল আমদানি থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নভেম্বরের জন্য অর্ডার ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে, তাই ডিসেম্বর থেকে তেল কেনায় একটি সম্ভাব্য পতন দেখা যেতে পারে। তারা আরও জানায়, সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ান তেল কেনা বন্ধ করার জন্য কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
এদিকে, বাণিজ্য আলোচনার জন্য ভারতীয় কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে রয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করেছে। মার্কিন আলোচকরা জানিয়েছেন যে, ভারতের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনা কমালে শুল্কের হার কমানো এবং একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গভীরতর জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান (মার্কিন) প্রশাসন ভারতের সাথে জ্বালানি সহযোগিতা গভীর করার আগ্রহ দেখিয়েছে। আলোচনা চলছে।’
এর আগে গতকাল বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, মস্কোকে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় চাপ দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভারতের রাশিয়ান তেল কেনা নিয়ে কথা বলেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত তেল কিনছিল বলে আমি খুশি ছিলাম না, এবং তিনি (মোদি) আজ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে তারা রাশিয়া থেকে তেল কিনবেন না।’ ট্রাম্প এটিকে একটি ‘বড় পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেন।
বাণিজ্য তথ্যে দেখা গেছে যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে রাশিয়ার তেল ভারতের মোট আমদানির ৩৬%, অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১.৭৫ মিলিয়ন ব্যারেল ছিল। অক্টোবর মাসে এই আমদানি বেড়ে ১.৯ মিলিয়ন বিপিডি হবে বলে কেপলারের তথ্যে দেখানো হয়েছে, কারণ ইউক্রেনীয় ড্রোন রাশিয়ার শোধনাগারগুলিতে আঘাত হানার পর রাশিয়া রপ্তানি বাড়িয়েছে।
রাশিয়া বৃহস্পতিবার বলেছে যে, ভারতের সাথে তাদের জ্বালানি অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকবে বলে তারা আত্মবিশ্বাসী। উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক ভারতকে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি সম্পদের চাহিদা আছে, এটি অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক এবং ব্যবহারিক, এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের অংশীদাররা আমাদের সাথে কাজ চালিয়ে যাবে।’
অস্থিতিশীল জ্বালানি বাজারে নাগরিকদের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেবে ভারত। এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা বন্ধ করছে, ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ভারত তেল ও গ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকারক দেশ। এর আমদানি নীতিও ভোক্তার স্বার্থকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও ভারত বহু বছর ধরে জ্বালানি আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ট্রাম্প স্বীকার করেন, ভারত হঠাৎ করে রুশ তেল কেনা বন্ধ করতে পারবে না। তিনি বলেন, এটা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তবে তিনি আশা করেন দ্রুতই প্রক্রিয়া শুরু করবে ভারত।
রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। গত আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া মার্কিন এই শুল্ক হার সারা বিশ্বের সর্বোচ্চ শুল্কগুলোর মধ্যে একটি।
যদিও ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।