২৯৮
“কর্পোরেট ডিভোর্স, বিকৃত রি-ইউনিয়ন, অসহায় সন্তান”
চাকুরীজীবী দম্পতি, দুই একটা সন্তান আছে কিংবা নাই। দুজনেই অফিসে থাকেন দিনের মিনিমাম আট ঘন্টা। সূর্যের আলোতে নিজেরা নিজেদের চেহারা খুব একটা দেখেন না। সকালে ফ্রেশ হয়ে সেজেগুজে অফিসে যান দুজনই।
স্বামীপ্রবর অফিসে গিয়ে দেখেন চারপাশে কি সুন্দর ডানাকাটা পরী সব কলিগ পারফিউম মেখে ঘুরছে। খোশগল্পে অফিস টাইম পার হয়ে যায়। বাসায় ফিরে দেখেন স্ত্রী অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরে রান্না চাপিয়েছে। সকাল বেলার সাজ দুজনেরই উধাও। তারপর খেয়েদেয়ে ঘুম।
দিনের আট/ নয় ঘন্টা রাস্তায় আরো দুই ঘন্টা মিলিয়ে ১০/১১ ঘন্টা শেষ। জীবনের সময়গুলো এভাবেই যাচ্ছে। কোয়ালিটি টাইম অফিসকেই, কলিগদেরই দেয়া হয়। পরিবার পায় একটি ক্লান্তিকর রাত্রি।
এদিকে স্ত্রীও অফিসে যায় আর চারপাশে সুবেশধারী, স্মার্ট কলিগদেরই দেখে। তারপর ঘরে ফিরে দেখে স্বামী ঘরে ফিরে গোসল করে লুঙ্গি কোনমতে জড়িয়ে, স্যান্ডো গেন্জিখানা বুক পর্যন্ত তুলে ফ্যানের নিচে বসে ভুড়িতে হাত বুলাচ্ছে আর টিভি দেখছে। যদিও এই স্বামীটাই অফিসে যায় সেজেগুজে, সেই তার অফিসের ললনাদের সামনে ডানাকাটা জ্বিন।
কিন্তু দুজনই এই প্রচন্ড চাপ থেকে মুক্তি চায়। দুজনেরই মনেহয় অন্যেরা ভাল আছে যাদের সাথে প্রতিদিন দেখা হয়। অথচ জীবনের গল্প সবারই প্রায় একই রকম। কিন্তু সমস্যাগুলো শুরু হয় ধীরে ধীরে। হয়তো দুজনই ভাল, বিশ্বস্ত কিন্তু একে অপরকে বিশ্বাস করে না। আসলে বিশ্বাস করানোর সময়ই তো নাই।
কর্পোরেট লাইফ আর্থিক স্বচ্ছলতা দেয় কিন্তু জীবন থেকে জীবনকে কেড়ে নেয়৷ সুখ খুঁজতে গিয়ে এরকম অনেকেই এই টানাপোড়েন আর ক্লান্তিকর জীবন থেকে বের হয়ে আসে।
তারপর আলাদা হয়ে আরো সমস্যার শুরু হয়। বাংলাদেশী সমাজের চরিত্র অনুযায়ী মেয়েরাই বেশি সমস্যায় পড়ে। একটা সময় সঙ্গীর তীব্র অভাব বোধ করতে থাকে। পুরনো বন্ধুদের খোঁজ করে কিন্তু সবাই ব্যস্ত।
তারপর আচমকা দেখে সারাদেশে অনলাইন মিডিয়ার কল্যাণে ব্যাক টু স্কুল, ব্যাক কলেজ শ্লোগান নিয়ে এসএসসি, এইচএসসি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। হতাশার জীবনে মনেহয় কিছুটা রঙ এলো। শুরু হলো অনুষ্ঠানের আয়োজন ৷ তারপর গ্রুপ আর আড্ডা, গান, বাচ্চামি। তারপর রংপুরের মেয়েটি খুঁজে পেল নেত্রকোনার কোন ছেলেকে। অত ভালো জানার দরকার নাই, সব বন্ধু, সব অমুক সালের। তারপর জড়িয়ে গেল এক অদ্ভূত সম্পর্কে। শান্তি খোঁজার মিশন যেন।
ছেলেটিও নিজের আটপৌরে জীবন নিয়ে হতাশ না হলেও স্ট্রং মরালিটি ও ইসলামিক জ্ঞান না থাকায় তারচেয়ে আপারক্লাস মেয়ের কাছ থেকে সাড়া পেয়ে নিজের বাচ্চার মাকে ছেড়ে মেতে উঠলো অন্য জায়গায়। তার কলেজ লাইফে অনেক না পাওয়ার হতাশা দূর হয়ে গেল। পেয়ার কা সেকেন্ড ইনিংস শুরু হলো। সেইসাথে শুরু হলো একটি সাজানো সংসার ধ্বংসের কাহিনী। অসহায় হয়ে গেল মফস্বলের কোন তরুণী স্ত্রী ও তার সন্তান। কেউ কি এরকম কোন ঘটনা এই কয়দিনের ভিতর শুনেছেন?
*কারণ, বিষয়টা অনেক নরমাল হয়ে যাচ্ছে। আমার মতো ছোটখাট উকিলের কাছেই যদি আট/ দশটা এইরকম কেস ইতঃমধ্যে চলে আসতে পারে, তবে বুঝে নেন বাস্তবতা আরো ভয়াবহ।*
এক অদ্ভূত ভাঙ্গন! সাময়িক জৈবিক সুখ!! অসহায় নাবালক/ নাবালিকা সন্তানগণ!! এই যার পরিণতি….
_______________________________
মোঃ ইমাম হাসান খান মামুন
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
মোবাইল ঃ ০১৭১২-৯৬৫৫৩০
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
মোবাইল ঃ ০১৭১২-৯৬৫৫৩০