১) মেঘভাঙা মন
আজমল হোসেন পাটওয়ারী (ফিরোজ)
তুমি বৃষ্টি চেয়েছিলে বলে,
কত মেঘের ভেঙেছি মন,
নীল আকাশে ছুঁড়েছি কাঁপন,
ঘুম ভেঙেছি নিরলস ক্ষণ।
তুমি আলো চেয়েছিলে একদিন,
আমি হয়েছি দীপ্তি রাতে,
পুড়েছি নিঃশব্দ জ্বলনে,
তবু রেখেছি প্রেমই হাতে।
তুমি ছুঁতে চেয়েছিলে হাওয়া,
আমি ভেসেছি গন্ধ হয়ে,
পায়ের ধুলোয় লিখেছি গান,
তুমি শুনোনি, থেকেছো দেয়ে।
তুমি বলেছিলে—“কিছু চাও না?”
আমি হেসে বলেছি, “না”,
তবু চোখে জমেছে বিসর্জনের
অজস্র নীল কুয়াশা।
তুমি যখন ফিরে চাওনি,
আমি থেকেছি ঠিক পেছনে,
প্রতিটি ফেরা না-ফেরার ভিড়ে
রেখেছি তোমাকেই বুকে টেনে।
তুমি বৃষ্টি চেয়েছিলে বলে,
আমি বর্ষা হয়েছি চুপচাপ,
তোমার ছাতার নিচে যেন
ভেজে না একটুও মনের স্নাপ।
২) দৃষ্টির অন্তরালে জীবনের ছায়াপথ
আজমল হোসেন পাটওয়ারী (ফিরোজ)
বৃষ্টি পড়ছিল তখন।
শহরের ব্যস্ততা থমকে গিয়েছিল কাঁচের জানালার ওপারে।
ক্যাফেটেরিয়া থেকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটির চোখে ছিল অপেক্ষার মেঘ।
ছেলেটি আসবে—এই বিশ্বাসেই সে চা’র অর্ধেক কাপ ঠান্ডা করে বসেছিল।
তার নাম আরিণা। আর ছেলেটির নাম নিষাদ।
দুজনের পরিচয় হয়েছিল বইয়ের পাতা ঘেঁটে—একজন কবিতার পাঠক, অন্যজন লেখক।
দুইটা মন ধীরে ধীরে সুরে বাঁধা পড়েছিল, এক অব্যক্ত ছন্দে।
অথচ তারা কেউ কাউকে দেখেনি তখনো।
কেবল লেখার ভিতর দিয়ে হেঁটেছে একে অপরের অনুভবের গলি বেয়ে।
অবশেষে দেখা হয়। এক বিকেলে, ঠিক এই ক্যাফেতে।
আরিণা জিজ্ঞেস করেছিল, “তুমি কেন লেখা বন্ধ করে দিলে?”
নিষাদ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলেছিল, “কারণ, আমি যা লিখি, তা কেউ বুঝতে চায় না।”
আরিণা মৃদু হেসেছিল, “তুমি জানো না, কেউ কেউ শুধু বোঝার অপেক্ষায় থাকে।”
সেই দিন থেকেই শুরু। ছায়া আর আলো মিশে এক অদ্ভুত প্রেম।
যেখানে চোখে চোখ রেখে চাওয়া নেই, কিন্তু নিঃশব্দে বলা অনেক কিছু।
নিষাদ ছিল যেন নদীর মতো—নিরব, গভীর, ধীর।
আর আরিণা ছিল পাহাড়ের চূড়া—যার কাছে পৌঁছানো সহজ নয়,
কিন্তু একবার ছুঁলে আকাশ নেমে আসে।
তারা ভালোবেসেছিল, কিন্তু বলেছিল ক’জনকে?
তাদের ভালোবাসা ছিল দৃষ্টির অন্তরালে—শব্দহীন, আড়ালভরা, সবার চোখের আড়ালে।
বাইরের চোখে তারা ছিল দুই পরিচিত মুখ, যারা হঠাৎ করে এক জায়গায় আসে,
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে, তারপর চলে যায়।
কিন্তু তাদের ভেতরের ছায়াপথ ছিল অন্যরকম।
সেখানে সময় থেমে থাকত, সেখানে একটুখানি হাসি হয়ে উঠত দিনভর জেগে থাকা আলো।
একদিন নিষাদ বলেছিল, “তুমি যদি একদিন না আসো?”
আরিণা বলেছিল, “তাহলে আমি তোমার ছায়ায় বসে থাকব,
আর তোমার অনুপস্থিতিকে ভালোবেসে যাব।”
তারা জানত, এই শহর তাদের ভালোবাসাকে কখনো পুরোপুরি গ্রহণ করবে না।
তবু তারা বেঁচে ছিল—নিজস্ব ছায়াপথে, যেখানে কেবল দুজনেই হাঁটত, নিরবে,
নিঃশব্দে, কিন্তু গভীরতম ভালোবাসায়।
কারণ ভালোবাসা সবসময় দেখা যায় না,
তবু সে থাকে—দৃষ্টির অন্তরালে জীবনের ছায়াপথে।