ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রেখে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা আয়োজনের দাবি
মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের স্মৃতিময় ফেব্রুয়ারি মাসেই আগামী ২০২৬ সালের বইমেলা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন লেখক, কবি, প্রকাশক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। আজ শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনারকক্ষে বইমেলা নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এই দাবি জানানো হয়।
সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জোট ‘গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য’ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বায়ক মফিজুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম।
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এবার ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলার আয়োজন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ আগামী বছর বাণিজ্য মেলা সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা একাডেমির বইমেলা বন্ধের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের অগণিত পাঠক, প্রকাশক, লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
বক্তারা বলেন, একুশের বইমেলার উদ্দেশ্য শুধু বই বিক্রি নয়। এর সঙ্গে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস–ঐতিহ্য জড়িত, দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও স্বাধিকার-স্বাধীনতার চেতনা জড়িত। দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় একুশের বইমেলা আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। অমর একুশে বইমেলা বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশ ও সৃজনশীল প্রকাশনাশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। জাতীয় নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অজুহাতে কোনোভাবেই একুশে বইমেলা স্থগিত রাখা যৌক্তিক হবে না। এর আগেও ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন ও বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার নজির রয়েছে। নির্বাচনের কারণে বইমেলা স্থগিত রাখার কোনো ঘটনা আগে ঘটেনি। এবার প্রয়োজনে শুধু নির্বাচনের দিন বইমেলা বন্ধ রেখে বাকি দিনগুলোতে স্বচ্ছন্দে বইমেলা করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা দাবি করেন বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে মহান একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারি মাসে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ত্যাগ করতে হবে। বইমেলা স্থগিতের সিদ্ধান্তে সৃজনশীল কাজ, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রটি সংকুচিত করা হচ্ছে বলে জনমানসে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই মেলার ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সচেষ্ট হতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) পরিচালক আবুল বাশার, প্রকাশক ও সংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ জাকির হোসাইন, চাকসুর সাবেক ভিপি এবং প্রগতি লেখক সংঘের সহসভাপতি শামসুজ্জামান, কবি ও গীতিকার হাসান ফকরি, গণসংস্কৃতি কেন্দ্রের জাকির হোসেন, জাতীয় কবিতা পরিষদের সবুজ মনির, গবেষক আবু সাঈদ, লেখক ও অনুবাদক মনজুর শামস, সুষম নাট্য সম্প্রদায়ের হামজা আনোয়ার, নাট্যকর্মী শুভাশিস দত্ত, সংস্কৃতিকর্মী ও খাপড়া ওয়ার্ডখ্যাত আবদুল শহীদের কন্যা জয়া শহীদ, সমাজ চিন্তা ফোরামের কামাল হোসেন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহসভাপতি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, মানচিত্র প্রকাশনের প্রকাশক দাউদ উল ইসলাম, গ্রন্থিক প্রকাশনের প্রকাশক আবদুর রাজ্জাক, সঞ্চিতা প্রকাশনীর প্রকাশক মো. মনিরুজ্জমান, মাওলানা ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ, সৃজনশীল প্রকাশনীর দেলোয়ার হাসান, লেখক কৌমুদী নার্গিসসহ বিভিন্ন নাট্যদল ও চলচ্চিত্র কর্মীরা।
